জন্মদিন নিয়ে আমার ভাবনা

জন্মদিনে আমার বড় মেয়ে নাবার দেয়া উপহার

আজ ২২শে সেপ্টেম্বর আমার ৫৪ বছর পূর্ণ হল আলহামদুলিল্লাহ। ফেসবুকের বদৌলতে এখন সবাই জেনে যায় কার জন্মদিন কবে এবং প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও আমার দুটি ফেসবুক একাউন্টের ওয়াল ও মেসেঞ্জার অসংখ্য শুভেচ্ছা, ভালবাসা ও দোয়ায় ভরে আছে। যারা ভালবাসা প্রকাশ করেছেন তাদের শুভেচ্ছা আমি আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করলাম। এর সাথে সাথে চিন্তা করলাম জন্মদিন পালন নিয়ে আমার ভাবনা সবার সাথে শেয়ার করব। আশা করি আমার কথাগুলো পাঠকদের মধ্যে চিন্তার উদ্রেক ঘটাবে।

আমাদের পরিবারে ঐতিহ্যগতভাবে জন্মদিন পালনের প্রচলন ছিলনা। কোনদিন আমার আব্বা-আম্মা আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাননি । কেক কেটে লোকজন দাওয়াত করে জন্মদিন পালনের তো প্রশ্নই ওঠেনা। ছোটবেলায় ভাইয়ারা জন্মদিনে মাঝে মাঝে কার্ড ও উপহার দিয়েছেন। আমার অনেক বন্ধুর বাসাতেই আমি প্রতি বছর জন্মদিনের দাওয়াত খেলেও নিজের জন্মদিনে কখনও কাউকে বাসায় খাওয়াতে পারিনি। বলতে অস্বীকার করবনা যে এ জন্য মাঝে মাঝে একটু হলেও খারাপ লাগত। তবে কাউকে কখনও এটা জানতে দেইনি ।

আমাদের বাসায় জন্মদিন পালনের সংস্কৃতি না থাকায় কখনও আব্বা-আম্মাকে আমরা জন্মদিনের শুভেচ্ছা দেইনি বা উপহার দেইনি। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ভর্তি হলাম তার দেড় মাস পর ৭ই নভেম্বর ছিল আব্বার ৬৮তম জন্মদিন। একজনের হাতে আব্বার জন্য একটা গিফট ও একটি জন্মদিনের কার্ড পাঠালাম প্রথমবারের মতো। জবাবে আব্বা লিখলেন, “আমরা কখনও নিজেদের বা তোমাদের জন্মদিন পালন করিনি। তারপরও তুমি আমার জন্মদিনে উপহার ও কার্ড পাঠিয়েছ। যে আবেগ ও ভালবাসা দিয়ে এগুলো পাঠিয়েছ তা গ্রহণ করলাম”।

আম্মা যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন আমি আমার জন্মদিনে তাঁকে ফোন করতাম। বলতাম, “সবাই আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, কিন্তু আমার জন্মদিন আমি আপনাকে নিবেদিত করতে চাই এবং আপনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আমার জন্মের পেছনে আমার কোন ক্রেডিট নেই। সবতো আপনিই করেছেন। নয় মাস পেটে ধারণ করেছেন। এরপর প্রসব বেদনার কষ্টের মধ্য দিয়ে আমাকে পৃথিবীতে এনেছেন। আর বড় করেছেন কত আদর ও ভালবাসা দিয়ে। তাই আমার জন্মদিনের পুরোটাই আপনার জন্য”। দু বছর হল এই কথাগুলো প্রকাশ করার মানুষটিকে হারিয়েছি।

ঘটা করে জন্মদিন পালন আমি জীবনে একবারই করেছি। তখন আমি আলীগড়ে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। বন্ধুরা আবদার করল জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে। ঠিক করলাম সবাইকে দাওয়াত দিয়ে এবারের জন্মদিন উদযাপন করব। আলীগড়ে পি এইচ ডি করছেন এমন একজন বড় বোনকে অনুরোধ করলাম রান্না করার জন্য। তিনি খুব আন্তরিকতার সাথে মজার পরাটা ও খাসির গোস্ত রান্না করলেন। বন্ধুরা কেক নিয়ে আসল। উপহারও কম আসলনা। এভাবেই জীবনে একবারের জন্য হলেও দাওয়াত করে জন্মদিন পালন করলাম। ছোটবেলার আফসোসের কিছুটা হলেও লাঘব হল। তবে এরপর যে ক বছর আলীগড়ে ছিলাম, খুব কাছের দু একজনকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া ছাড়া আর তেমন কিছু করে জন্মদিন পালন করিনি।

বিয়ের পর স্ত্রী-কন্ন্যাদের সাথে প্রতি বছর খুবই অনাড়ম্বরভাবে জন্মদিন পালন করি। দুএকটি উপহার পাই আর পরিবারের সবাই একসাথে খাই – ব্যাস, এতটুকুই। এবারো এর ব্যতিক্রম নয়। বাচ্চারা কার্ড ও উপহার দেয় ও খুব সুন্দরভাবে ওদের সাথে এই দিনটি কাটাই। তবে যে দেশে থাকি সেখানে বাচ্চারা জন্মদিন দেখে দেখেই বড় হয়েছে ও হচ্ছে। তাই মাঝে মাঝে ওদের জন্মদিনে আপনজনদের দাওয়াত দেই, তবে প্রতি বছর নয়। ওদের বলা আছে যে জন্মদিন পালন করতেই হবে এই চিন্তা আমার পছন্দ নয়, তাই ছোট বয়সে মাঝে মাঝে উদযাপন করা যেতে পারে, তবে নিয়মিত নয়।

জন্মদিন পালন নিয়ে দু রকম বাড়াবাড়ি হয়। এক ধরনের মানুষ বেশী জাঁকজমকের সাথে এটা পালন করে থাকে। গান-বাজনা, হৈ হুল্লোড়, আর স্ফূর্তির সীমা ছাড়িয়ে যায়। এটা কোনভাবেই সঠিক নয়। আর এটা নিয়ে এত উচ্ছ্বাসের কি আছে আমি বুঝিনা। আমি এ দিনটিকে অন্য দিনের মতোই মনে করি। কাউকে জন্মদিনে Happy Birthday বলা থেকে জন্মদিনে দোয়া পাঠাতে বেশী পছন্দ করি। ফেসবুকে কাউকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর অভ্যাস নেই, তবে যারা এটা করেন তারা ভালবেসেই করেন। আমি একটু বেরসিক দেখে বোধ হয় এটা করিনা।

আর অন্যদিকে এক ধরনের মানুষ এটাকে হারাম বানিয়ে ফেলে। তাদের যুক্তি হচ্ছে পাশ্চাত্য সাংস্কৃতিকে অনুসরণ করার ব্যপারে রাসুল (সঃ) এর নিষেধাজ্ঞা আছে। আমি এমন কোন হাদিস শুনিনি যেখানে পরিবারের সাথে জন্মদিন পালন করাকে হারাম করা হয়েছে। অন্য ধর্মকে অনুসরণ করার ব্যাপারে স্পষ্ট বলা আছে, কিন্তু জন্মদিন পালন কি খৃষ্টান ধর্মের একচ্ছত্র ধর্মীয় সংস্কৃতি? ইসলামে হারাম কি কি তা স্পষ্ট বলা আছে। বাকী সব হালাল। তাই জন্মদিন পালন হারাম হতে পারেনা। বিখ্যাত আমেরিকান স্কলার ডঃ ইয়াসির কাজীর ভাষায় এটাকে ‘মুবাহ’ বলা চলে।

৫৪ বছর পূর্ণ হওয়া মানে বার্ধক্যের দিকে আরেকটু অগ্রসর হওয়া। জানিনা আর কটি জন্মদিন আল্লাহ্‌ লিখে রেখেছেন। শুধু এতটুকু চাই যে আল্লাহ্‌ যখনি মৃত্যু দেন তা যেন ইমানের সাথে হয় আর পরকালে তাঁর সামনে হাজির হওয়ার সময় যেন লজ্জিত হতে না হয়।

2 thoughts on “জন্মদিন নিয়ে আমার ভাবনা”

  1. celebrate birthday day is not prohibited in Islam but celebrate birthday is something live on false because birthday is not back on life anymore example someone born on 2nd of January 2020 next year January 2nd will not be same day anymore and if you follow different calander, like lunar calander will completely different day and the date as well . Bangla, Chinese, tamil calander also. There not the question of halal and haram though this is my personal opinion.
    Your father was one of the top great dayee ilallah in the whole world,excellent foresight regarding India and Bangladesh after 49 years 100percent right. I pray for him all the time Allah grant him JANNATUL FERDAUSH . I can’t stop my tears when I hear the name of AMAN AZAMI .
    I pray to Allah save him.
    Thank you for your dedication to islam. Hope Allah will accept your effort.
    Alhamdulillah for 54 years, I pray to Allah give you long life so do more for islam.

    Reply

Leave a Comment